Motivational Speech

--

ইমাম আহমাদ (রাহি) এর ছেলে জিজ্ঞেস করলেন শান্তির কখন আসবে?
তিনি উত্তর দিলেন , জান্নাতে যখন প্রথম কদম রাখব।
.
অনেকে মনে করেন হুজুরদের বুঝি কোন দুঃখ কস্ট নেই। অপূর্ণতা নেই। না পাওয়ার বেদনা নেই। তারা কোনদিন ডিপ্রেশনে ভোগে না। চোখ দিয়ে কখনো পানি ঝরেনা। না ব্যাপার টা এমন না। তারাও মানুষ। তাদের ও অনুভুতি আছে, কস্ট আছে, অপূর্ণতা আছে। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে তারা জানে যে, এই দুনিয়া সব কিছু পাবার জায়গা না। দুনিয়াতে তো কখনই চিরশান্তি আসবে না। শান্তিতো কেবল জান্নাতে প্রথম কদম রাখার পর।
.
বাস্তবতা হচ্ছে, শয়তান একজন দ্বীনদ্বার ব্যাক্তির পেছনে আরো বেশী এফোর্ট দেয়। তাকে আল্লাহর রাস্তা থেকে দুরে সরাতে চায় ৷ তার জন্য নানা রকম ফাদ পাতে। আর এসব ফাদের অন্যতম একটা হচ্ছে ডিপ্রেশন বা হতাশা। একজন দ্বীনদ্বার ব্যাক্তিও উপরের মাঝে মাঝে ডিপ্রশন ভর করে। কিন্ত সে জানে তাকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। শয়তানের সাথে তার এই লড়াই চলমান। এভাবে সে তার রুহ কে শক্তিশালী করে। আর এক সময় শয়তান পরাজিত হয়। তবে এই অবস্থানে একদিনে যাওয়া সম্ভব না। রবের উপর তায়াওক্কুল করে চেস্টা চালিয়ে যেতে হবে। অন্তরে কে পরিশুদ্ধ করে তুলতে হবে। দুঃখ, কস্ট, অপূর্ণতা কে রবের কাছে আসার মাধ্যম বানাতে হবে। অন্তরে যে কালি জমেছে যিকরের দ্বারা তা পরিস্কার করতে হবে। এভাবেই অন্তরের সজিব হয়ে উঠবে । প্রশান্ত হবে। আর শয়তানকে পরাজিত করার শক্তি অর্জন করবে।
.
আমরা অনেকেই হতাশ হলে motivational speech শুনি। দুনিয়ার বেশীর ভাগ মটিভেশনাল বক্তাই ডিপ্রেশন দুর করতে দুনিয়ার অপূর্ণতা কিভাবে পুরন করতে হয় তা নিয়ে আলোচোনা করেন। মটিভেট করেন দুনিয়াকে আয়ত্ব করার রেসে সালিম হতে।
.
চলুন এবার একটু ভিন্ন দৃশ্য কল্পনা করা যাক, আপনি মরুভুমিতে আটকে আছেন। আপনার আশে পাশে বাচার মত কোন সম্বল নেই। সেই সময়ে আপনাকে মোটিভেট করতে কোন জিনিস টা বেশী দরকার? আপনার চাহিদা কি? খাবার, পানি,সঙ্গী ! এই তো।
.
অথচ ইব্রাহিম (আ) যখন তার সন্তান আর স্ত্রীকে মক্কার জনাকীর্ণ ভূমিতে রেখে যান, তখন তাদের মোটিভেশনের জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া কি করেছিলেন ?
.
رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ الصَّلاَةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ
হে আমাদের পালনকর্তা, আমি নিজের এক সন্তানকে তোমার পবিত্র গৃহের সন্নিকটে চাষাবাদহীন উপত্যকায় আবাদ করেছি; হে আমাদের পালনকর্তা, যাতে তারা নামায কায়েম রাখে। অতঃপর আপনি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদেরকে ফলাদি দ্বারা রুযী দান করুন, সম্ভবতঃ তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে [ সুরা ইবরাহীম ৩৭ ]
.

• ইব্রাহিম (আ) প্রথমে দুয়া করেছেন,” যাতে তারা সালাত কায়েম করে। “অর্থাৎ, মটিভেশনের প্রথম উপাদান হচ্ছে ইবাদাহ, আল্লাহর স্বরন। যখন আমাদের মাঝে ডিপ্রেশন দানা বাধতে শুরু করবে, কস্ট লাগবে। আমরা রবের সামনে দাড়িয়ে যাব। দূয়া কান্না কাটি করব। যিকরের দ্বারা অন্তর কে প্রশান্ত করব। জান্নাত, জাহান্নামের কথা স্বরন করব। কোরআন তিলাওয়াত করব। ইনশা’আল্লাহ আমাদের রব আমাদের সমস্ত হতাশা দুর করে দেবেন। অন্তরকে প্রশ্রান্ত করে দেবেন।

.

• ২য় যে বিষয়টি আসবে তা হলো, “কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন” অর্থাৎ, সামাজিক চাহিদা। মানুষ সামাজিক জীব। হুজুদের জন্য মটিভেশনের অন্যতম বড় হাতিয়ার হচ্ছে আলেমদের সোহবত, দ্বীনি ভাইদের সাথে আড্ডা, পরিবার, নেকাকার স্ত্রী-স্বামী, সন্তান। মন খারাপ হলে ঘরে বসে থাকবেন না বেড়িয়ে পড়ুন৷ দ্বীনি ভাইদের সাথে আড্ডা দিন, সফর করুন,দাওয়াহ দিন। পরিবারকে দাওয়াহ দিন ৷ পরিবারকে সময় দিন। ইসলাহি হালাকায় গুলোতে যান । জুমাহর খুতবায় যান। একাকি থাকা মানে শয়তান কে আরো সুযোগ করে দেয়া।

.

• শেষ যে উপাদানটির কথা বলা হয়েছে তা হলো,”তাদেরকে রিয্ক প্রদান করুন ফল-ফলাদি থেকে, আশা করা যায় তারা শুকরিয়া আদায় করবে”,অর্থাৎ, মানুষের জৈবিক চাহিদার দিকে খেয়াল রাখা। সাধারণ যত মোটিভেশন থিওরি আছে, তাতে একে অগ্রাধিকার দেয়া হয় প্রথমে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তা সবার শেষে, কেননা, আমাদের মূল প্রেরণা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহর দ্বীনের জন্য কাজ করে যাওয়া। জান্নাত।
.

আর এই ক্ষেত্রেও লক্ষণীয় যে, ইব্রাহিম (আ) তার দূয়াতে তার পরিবারের জন্য বিলাসী জীবন চান নি। রিজিকের জন্য দূয়া করেছেন। যতটুকু দরকার ততটুকু। বিলাসী জীবনের যাপনের জন্য দুনিয়ার রেসে সামিল হবার দূয়া তিনি করেন নি। আমাদের ও এটা খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা দুনিয়ার চাহিদাকে না আবার সবার আগেই প্রাধ্যন্য দিয়ে বসি। কিংবা বিলাসী জীবনের পেছনে ছুটে বেড়াই। বরং যতটুকু দরকার ততটুকুই দুনিয়াকে গ্রহণ করি। কারন অধিক সম্পদ দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করে দেয়। আর আমরা ঘুরতে থাকি হতাশার চক্রে।

--

--

অগোছালো ডায়েরি
অগোছালো ডায়েরি

Written by অগোছালো ডায়েরি

ইনশা’আল্লাহ , এখানে গুরুত্বপূর্ন লিখা গুলো সেভ করা হবে ।

No responses yet